বিচার শেষ না হওয়ায় হতাশ মরহুমের পরিবার
নূরুল হক, মণিরামপুর:
যশোর জেলা কৃষকলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও মণিরামপুর উপজেলা কৃষক লীগের তৎকালিন সভাপতি শফি কামাল হত্যা কান্ডের ৭ বছর অতিক্রম করলেও হত্যাকারীদের এখনও বিচার শেষ হলো না। মরহুম শফি কামালের স্ত্রী-সন্তানেরা খুনিদের যথাযথ বিচার হোক এ আশায় এখনও বুকে পাথর চাপা দিয়ে হতাসার মধ্যে দিনানিপাত করছেন। আর অপেক্ষার প্রহর গুনছেন কবে শুনতে পাবেন হত্যাকারীদের ফাঁসির রায়।
আলোচিত এ হত্যা মামলায় ২৬ জনের নাম উল্ল্যেখসহ অজ্ঞাত ১৪/১৫ জনকে আসামী করে মামলা হলেও-এখনও বিচার না পাওয়ায় নিহতের পরিবার মর্মাহত এবং হতাশ হয়ে পড়েছেন।
মামলার বিবারণ থেকে জানায়ায়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ২০১৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর দুপুর ২টার সময় আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডঃ খান টিপু সুলতানের নৌকা প্রতীকের পোষ্টার লাগাতে গিয়ে চিহ্নিত সন্ত্রাসী কর্তৃক নির্মমভাবে খুন হয়েছিলেন জেলা কৃষকলীগের তৎকালিন সহসভাপতি ও মণিরামপুর উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি মরহুম শফি কামাল।
উপজেলা সদর থেকে ৭ কিমি পশ্চিমে খেদাপাড়া ইউনিয়নে মরহুমের পৈত্রিক নিবাস গরীবপুর সংলগ্ন গরীবপুর-চাঁঁঁদপুর দাখিল মাদ্রাসার সামনে চিহ্নিত সন্ত্রাসী চক্রের হাতে প্রকাশ্যে দিবালোকে নৃশংসভাবে খুন হয় কৃষকলীগের জনপ্রিয় সদালাপী মিষ্টভাষী এই নেতা। তার মৃত্যুর খবর স্থানীয়, জাতীয় দৈনিক পত্রিকাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে দেশব্যাপি আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ফলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সহযোগিতা, আশ্বাস সর্বোপরি প্রশাসনের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে নিহতের জৈষ্ঠ্য পুত্র মণিরামপুর প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক মোঃ হরুন-অর-রশিদ সেলিম বাদী হয়ে ২৬ জনের নাম উল্ল্যেখপূর্বক অজ্ঞাত ১৪/১৫ জনকে আসামী করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
তদন্তশেষে পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে আসামী জি,এম ওমর ফারুক ও সাহেব আলী নামে ২ আসামীর আকস্মিক ভাবে মৃত্যুবরণ করেন। তাছাড়া মামলার অন্যাতম আসামী মেসবাউল ইসলাম চন্টু রেলে কাটা পড়ে এবং আনিসুর রহমান আনিস নামে অপর এক আসামী সন্ত্রাসীদের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়।
আসামী রিপন, শফিক, হালিম আরিফ, কুতুব, ইউছুপ, টুটুল, চঞ্চলসহ বেশ কয়েকজন পুলিশের হাতে আটক হয়ে পরবর্তীতে আদালত থেকে জামিন নিয়ে ভারত, মালেশিয়াসহ মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যায়।
পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশ অমান্য করলে তাদের নামে পুনরায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হলে তারা আর আদালতে হাজিরা দিতে আসেনি। তবে বিদেশ পাড়ি জমানো রেজাউল ইসলাম নামের এক আসামী সম্প্রতি বাড়ী ফিরলে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ তাকে আটক করে আদালতের কাছে সোপর্দ করে। আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করার কিছুদিন পরই জামিনে বের হয়ে আসে। এছাড়া মাঞ্জুর ও রাজু নামে দু’জন আসামী শফি কামাল হত্যার কয়েকদিন পরেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়।
নিহতের কনিষ্ঠ পুত্র মামুনুর রশিদ জুয়েল বলেন, আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের পোষ্টার টাঙ্গাতে গিয়ে আমার পিতা শহীদ হয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকলেও এখনও আমার পিতার হত্যাকারীদের বিচারের কোন কুল-কিনারা হয়নি। তিনি আরও বলেন, মামলার কয়েকজন আসামী বিভিন্ন মাধ্যমে এবং প্রকাশ্যে মামলা প্রত্যাহার করার জন্য লাগাতর আমিসহ আমার পরিবারকে হুমকি অব্যহত রেখে চলেছে। আমরা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি। না জানি আবার কোন বিপদ চলে না আসে আমাদের পরিবারের উপর। নিহতের স্ত্রী হাসিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী হত্যাকান্ডের ৭টি বছর পার হয়ে গেল।
আমি এখনও আমার স্বামী হত্যার বিচার পাইনি। আমার সন্তানদের আমি জোর দিয়ে বলতে পারিনা তাদের বাবাকে যারা প্রকাশ্যে কুঁপিয়ে হত্যা করেছে-সেই হত্যাকারীদের বিচার কবে হবে বা আদৌ হবে কি-না। এই দীর্ঘদিনেও আমার স্বামী হত্যার বিচার না পাওয়ায় আমার সন্তানসহ আমি হতাশ হয়ে পড়েছি। জানতে চাইলে বাদী পক্ষের আইনজীবি অ্যাড. বশির আহমেদ খান বলেন, জেলা কৃষক লীগ নেতা শফি কামাল হত্যা মামলাটির কয়েকজন আসামী পলাতক থাকায় বিজ্ঞ আদালত দৈনিক পত্রিকায় আসামী হাজির হবার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দিয়েছেন। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে যদি আসামী হাজির নাও হয়-তখন মামলাটি বিচারে চলে যাবে। আশাকরি বিজ্ঞ আদালত দ্রæতই মামলাটি বিচারের নিয়ে যাবেন।